Pages

Followers

Thursday, 8 March 2012

আসুন 'প্যানিং' শিখি


আমরা অনেকেই যারা ছবি তুলতে পছন্দ করি, কোন না কোন সময় 'প্যানিং' শব্দটা শুনেছি। প্যানিং কি বা কাকে বলে এবং কিভাবে আমরা সহজে প্যানিং করতে পারি আজকে সে ব্যাপারে কথা বলব। বলে নেয়া ভাল আমি বিরাট পণ্ডিত না, নিজে নিজে ইন্টারনেট আর বই ঘেঁটে ঘেঁটে যতটুকু শিখেছি প্যানিং সম্পর্কে, ততটুকুই সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করব। এখানে অনেক অভিজ্ঞ আর দক্ষ আলোকচিত্রী আছেন, আশা করছি তারাও মন্তব্য অংশে টিপস দিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করবেন যাতে আমরা আরো বেশি বেশি শিখতে পারি।
একটা রিয়েল লাইফ ঘটনা দিয়ে শুরু করি। একবার লাউয়াছড়া থেকে আসছি, রাস্তায় গাড়ি একজায়গায় গ্যাস নেয়ার জন্য দাঁড়াল। লাউয়াছড়া গিয়েছিলাম ৩ বন্ধু মিলে ছবি তুলার জন্য। নুমায়ের তখনই অনেক ভাল ছবি তুলে, আমি আর ইশতিয়াক ২ জনই নতুন নতুন ডি এস এল আর ক্যামেরা কিনেছি। যাই হোক গাড়ি গ্যাসের লাইনে, আমরা ৩ জন দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার ধারে। নুমায়ের হঠাৎ বলল যে প্যানিং করার ট্রাই করা যাক, আমি কিছুই বুঝলাম না কারণ আমি তখন পর্যন্ত নামটাই কোনদিন শুনিনি। নুমায়েরকে জিজ্ঞেশ করাতে ও আমাকে হালকা-পাতলা একটা ধারণা দিল প্যানিং সম্পর্কে, তবে ওর নিজের ধারণাও খুব বেশি পোক্ত ছিলনা যে কি করে একটা সুন্দর প্যান্ড ছবি তুলা যায়। ৩ জনে মিলে ঐ আধা-খাঁচড়া জ্ঞান নিয়েই অনেক অনেক চেষ্টা করলাম, বলাই বাহুল্য তেমন কোন ভাল ছবিই পেলাম না। কেন পেলাম না এবং কি করলে পেতাম এই ব্যাপারগুলা এখন আমরা আস্তে আস্তে দেখব।

এই আলোচনায় আমি ফটোগ্রাফির বেসিক টার্ম আর সেটিংস গুলা যেমন এ্যাপারচার, শাটার স্পীড, আই এস ও ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবনা। যদি এমন কেউ থাকেন যে এই পোস্ট পড়ছেন কিন্তু এই ব্যাপারগুলা সম্পর্কে ভাল জানেননা, তাহলে আগে এই বেসিক গুলা জেনে নিন। এই পোস্টে আমি এই বিষয়গুলা আলোচনা করবনা।

আচ্ছা এবার বোধহয় ধরে নিতে পারি যে আপনি বেসিক জিনিসগুলা অলরেডি জানেন। তো মনে করুন একদিন আপনি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন (উদ্দেশ্য কি সেটা আপনি জানেন), আর আপনার গলায় সাধের ডি এস এল আর টা ঝুলছে। রাস্তায় হঠাৎ খুব সুন্দর একটা গাড়ি দেখতে পেলেন, ঠিক করলেন গাড়িটার একটা জটিল ছবি তুলে বন্ধু মহলে হৈ চৈ ফেলে দিবেন। আপনার ক্যামেরায় সেটিং তখন এ্যাপারচার F 9.0 আর শাটার স্পীড ১/২০, আই এস ও অটো মোডে। তো ঐ সেটিংয়েই গাড়িটাকে তাক করে ছবি তুলে ফেললেন, পেলেন এরকম কিছু


স্বাভাবিকভাবেই ছবিটা পছন্দ হলনা, এরকম ছবি চান না দেখেই না পকেট খালি করে ডি এস এল আর কিনেছেন! একটু চিন্তা করেই বুঝতে পারলেন যে গাড়িকে স্পষ্ট দেখতে চাইলে শাটার স্পীড ১/২০ থেকে বাড়াতে হবে, এবং বাড়িয়ে সেটা ১/৮০ করলেন। সেই সাথে এক্সপোজার আগের মতই রাখার জন্য এ্যাপারচার এ্যাডজাস্ট করে নিলেন (শাটার প্রায়োরিটি মোড হলে ক্যামেরা নিজেই করে নিবে)। তারপর মনমত আরেকটা গাড়ি দেখতে পেয়ে দিলেন শাটার চেপে। এবার ছবিটা হল এরকম


বাহ ছবিটা বেশ! গাড়ি, গাড়ির ড্রাইভার, গাড়ির পিছনে সাইনবোর্ড সব একেবারে চকচকে এসেছে, আহা সাধু সাধু! কিন্তু কি জানি একটা মিসিং, দেখে মনে হচ্ছে গাড়িটা থেমে আছে রাস্তার মাঝে। গাড়িটা যে সবকিছুকে ছাড়িয়ে শাঁ করে চলে যাচ্ছিল, সেই ব্যাপারটাকে কোনভাবে ছবিতে আনা যায়না? আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে বলি, "হ্যাঁ যায়, এই টেকনিকটার নামই হচ্ছে প্যানিং।"
প্যানিং কে ভালভাবে বুঝার জন্য আসুন একটা সহজ পরীক্ষা করি। আপনার ডান অথবা বাম হাতের তর্জনি (অথবা মধ্যমা, যদি মঞ্চায় খাইছে ) খাড়া করে নিজের নাক বরাবর চোখের সামনে ৬ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট দূরত্বের মধ্যে ধরুন। এবার এক চোখ বন্ধ করুন আর দ্বিতীয় চোখ ফোকাস করুন আঙুলের উপর, তারপর আঙুলকে আনুভূমিকভাবে ডান থেকে একেবারে বামে অথবা বাম থেকে একেবারে ডানে একটু জোরে সরান। এই এদিক-ওদিক একাধিকবার করতে পারেন এবং খোলা চোখ দিয়ে পুরোটা সময় আঙুলকে অনুসরণ করুন। কি দেখতে পাচ্ছেন? পুরো মুভমেন্টের সময় জুড়ে আঙুল স্পষ্ট দেখতে পেলেন কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড ঝাপসা বা Blurred. এইখান থেকে এরকম একটা মোমেন্টকে টুস করে ধরে ফেলাই প্যানিং। এর মানে হচ্ছে প্যান্ড ফটোতে সাবজেক্ট থাকবে স্পষ্ট, ক্রিস্প আর ব্যাকগ্রাউন্ড থাকবে ব্লার্ড (ঝাপসা), যেটা ব্যাকগ্রাউন্ডের সাপেক্ষে সাবজেক্টের গতিময়তাকে তুলে ধরবে দর্শকের সামনে।


এইবার আসি অস্ত্রপাতি আর রণকৌশলের কথায়। প্যানিংয়ের জন্য প্রধানত ৩টা পয়েন্ট মনে রাখা জরুরী:

>> প্রথমত, লম্বা ফোকাল লেংথের লেন্স ব্যবহার করতে পারলে ভাল, হতে পারে সেটা জুম লেন্স অথবা প্রাইম লেন্স। লং ফোকাল লেংথের লেন্সকে তুলনামূলকভাবে ভাল বললাম কারণ আপনি প্রয়োজনে দূরের সাবজেক্টকে প্যান করতে পারবেন, আর নিরাপদ দূরত্বে থেকে করতে পারবেন (রেসিং সার্কিটের কথা চিন্তা করুন)। তবে এমন নয় যে লং লেন্স ছাড়া কাজই হবেনা, ১৮-৫৫ কিট লেন্সেও কাজ চলবে।
>> দ্বিতীয়ত, ফ্রেমিংয়ের সময় খেয়াল রাখবেন যাতে সাবজেক্ট ফ্রেমের মধ্যে খুব দূরে বা খুব কাছে না থাকে। সাবজেক্ট কে এমন দূরত্বে রাখুন যাতে সেটা আপনার ফ্রেমকে মোটামুটি fill করে রাখে, তাহলে অনেক ভাল দেখাবে।
>> তৃতীয় পয়েন্টটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্যানিং করার জন্য এমন সাবজেক্ট বেছে নিন যেটা বাম থাকে ডানদিকে অথবা ডান থেকে বামদিকে যাচ্ছে। গতিপথ হতে পারে সরলরৈখিক (যেমন সাইকেল, গাড়ি অথবা যেকোন যানবাহন যা সমতল রাস্তায় চলছে) অথবা কিছুটা কৌণিক (যেমন দোলনা অথবা ঢাল বেয়ে নামা চলমান কিছু )। যদি এমন কোন সাবজেক্ট সিলেক্ট করেন যা আপনার দিকে আসছে বা আপনার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তাহলে প্যানিং হবেনা, কারণ এক্ষেত্রে ক্যামেরায় কোন ব্যাকগ্রাউন্ড আসবেনা। যেমন নিচের ছবিটা


এবার একটা প্রশ্ন করি, "প্যান্ড ফটোতে সাবজেক্ট থাকবে স্পষ্ট, আর ব্যাকগ্রাউন্ড থাকবে ব্লার্ড"- এটা কিভাবে করা যায়? উত্তর হল এটা তখনই সম্ভব যখন ক্যামেরার সাপেক্ষে সাবজেক্ট একেবারে স্হির এবং ব্যাকগ্রাউন্ড গতিশীল। আরো সোজাভাবে বললে আমরা যখন ট্রেনে বসি তখন ট্রেনের গতি আর আমার গতি একই, কিন্তু বাইরে তাকালে দেখি সবকিছু পিছনে চলে যাচ্ছে। এর মানে ট্রেনের সাপেক্ষে আমি বা আমার সাপেক্ষে ট্রেন স্হির কিন্তু বাইরের যেকোনকিছু উভয়ের সাপেক্ষে গতিশীল। প্যানিংয়ের জন্য ক্যামেরাকে সাবজেক্টের সাথে পারফেক্ট Sync-এ আনতে হয় যাতে ক্যামেরার সাপেক্ষে সাবজেক্ট একেবারে স্হির হয়ে যায় (আঙুলের পরীক্ষার কথাটা মনে করুন)। এই অবস্হায় শাটার চেপে ছবি তুললে প্যান্ড ফটো পাওয়া যাবে।

এখন আরো কিছু সেটিংস নিয়ে আলোচনা করব যা ভাল প্যানিংয়ের সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। পুরো ব্যাপারটাকে মোট ৭ টা পয়েন্টে ভাগ করে ব্যাখ্যা করলে আশা করি সহজবোধ্য হবে:

১) শাটার প্রায়োরিটি মোড: ক্যামেরাকে শাটার প্রায়োরিটি মোডে রাখুন। ক্যাননের ক্ষেত্র এই মোডের নাম Tv আর নাইকনের ক্ষেত্রে S। এই মোডের সুবিধা হচ্ছে আপনাকে শুধু শাটার স্পীড পরিবর্তন করতে হবে, এ্যাপারচার ক্যামেরা নিজে নিজে এ্যাডজাস্ট করে নিবে।

২) শাটার স্পীড: মনে রাখবেন প্যানিংয়ের সময় শাটার স্পীড তুলনামূলকভাবে কম বা ধীর রাখতে হয়, যদিও ঠিক কতটুকু কম/ধীর হবে সেটাও নির্ভর করে সাবজেক্টের গতির উপর। যেমন সাইকেলের প্যানিংয়ে যে শাটার স্পীড লাগবে রেসিং কারের ক্ষেত্রে শাটার স্পীড তার চেয়ে বেশি হবে। ভাল হয় যদি একটা রেঞ্জ নিয়ে শুরু করেন যেমন ১/১৫ থেকে ১/৩৫। এক্ষেত্রে রুল অফ থাম্ব হচ্ছে যদি ছবি তুলার পর দেখেন সবকিছু (সাবজেক্ট ব্যাকগ্রাউন্ড দুটোই) ঝাপসা তাহলে শাটার স্পীড বাড়ান, যদি দেখেন সবকিছুই স্পষ্ট তাহলে শাটার স্পীড কমান।

৩) অটো ফোকাস: নাইকন ক্যামেরার অটো ফোকাসের ক্ষেত্রে Continuous Auto focus mode (C) আর ক্যাননের ক্ষেত্রে AI Servo mode সিলেক্ট করুন। এই মোড সক্রিয় থাকলে ক্যামেরার অটো ফোকাস continuously সাবজেক্টকে ফোকাসে রাখে যদিও ক্যামেরা এবং সাবজেক্ট দুটোই প্রতি সেকেন্ডে জায়গা পরিবর্তন করছে। যদি সিংগেল বা ওয়ান শট অটো ফোকাস মোড সিলেক্টেড থাকে, তাহলে ক্যামেরা প্রথমে একবার সাবজেক্টকে ফোকাস করার পর সেটাকে লক করে ফেলে এবং সাবজেক্টের জায়গা পরিবর্তনের সাথে সাথে ফোকাসকে এ্যডজাস্ট করেনা। ফলে যেই মুহূর্তে ছবিটি তুলছেন তখন হয়তো অলরেডি সাবজেক্ট আউট অফ ফোকাস হয়ে গেছে।

৪) ফোকাস পয়েন্ট: ডি এস এল আর ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে তাকালেই নয়টি ফোকাস পয়েন্ট দেখা যায় তাইনা? প্যানিংয়ের সময় সবসময় মাঝখানের ফোকাস পয়েন্টটা ব্যবহার করতে হবে, এই ফোকাস পয়েন্টকে বলে 'সেন্টার অটোফোকাস পয়েন্ট'। এটা ব্যবহার করার দুটো সুবিধা আছে

>>যেকোন ক্যামেরার সেন্টার অটোফোকাস পয়েন্ট সবচেয়ে দ্রুত আর স্পষ্ট ফোকাস পয়েন্ট।
>>এই সেন্টার অটোফোকাস পয়েন্ট দিয়ে সাবজেক্টকে টার্গেট এবং ট্র্যাক করা সুবিধাজনক। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে উপরে বলেছি, প্যানিংয়ের সময় ক্যামেরা continuously সাবজেক্টকে অনুসরণ করবে। মনে করুন আপনি স্নাইপার, ক্যামেরা আপনার রাইফেল, শাটার হচ্ছে ট্রিগার, সাবজেক্ট হল টার্গেট আর সেন্টার অটোফোকাস পয়েন্টটা হচ্ছে রাইফেলের টেলিস্কোপের মাঝের ক্রস বিন্দু টা যেটা দিয়ে আমরা টার্গেট করি। আশা করি বুঝাতে পেরেছি।

৫) কখন শুট করব? ধরে নিলাম আপনি এই মুহূর্তে প্যানিং করছেন, আপনার ক্যামেরা সাবজেক্টের সাথে একেবারে Sync এ আছে। প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কখন ছবিটা তুলবেন? সাবজেক্ট যখন ঠিক আপনার সামনে আসবে তখন? উত্তর হচ্ছে, যদি আপনি সাবজেক্ট ঠিক আপনার সামনে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন এবং এরপর শাটার চেপে একটা ছবি তুলেন, ঠিকঠাক ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা খুব খুব কম। তাই সাবজেক্টকে ট্র্যাক করার পরপরই টাসটাস শাটার চাপতে থাকুন এবং একাধিক ছবি তুলুন। গোলাগুলির ভাষায় বললে একবার ফায়ার না করে ব্রাশ ফায়ার করতে থাকুন। আর এ থেকেই ৬ নাম্বার পয়েন্টের উদ্ভব।

৬) কোন্ শাটার মোড? উপরেই বলেছি আপনাকে ব্রাশ ফায়ার করতে হবে, তাই সিলেক্ট করুন নাইকনে Continuous Drive Mode (CH) আর ক্যাননে Multiple Shot Mode। Single Shot Mode এ একবার শাটার চাপলে ক্যামেরা একটাই ছবি তুলে, কিন্তু Continuous Drive Mode এ শাটার যতক্ষণ চেপে রাখবেন ক্যামেরা ছবি তুলতে থাকবে। তবে একবারে কয়টা ছবি উঠবে সেটা নির্ভর করবে ক্যামেরার fps রেটিং বা Burst রেটিংয়ের উপর, ক্যামেরাভেদে এসব রেটিং বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এই আলোচনায় আজকে আর যাবনা।

৭) আর সবশেষে প্র্যাকটিস!!

আমি অনেকই অলস, ছবি তুলিনা বেশি, ফলাফল মোটামুটি কোয়ালিটির ছবি। নমুনা নিম্নরূপ:

নমুনা-১


নমুনা-২


নমুনা-৩


নমুনা-৪ (এটা যদিও পুরা প্যানিং না, কিন্তু প্যানিং ইফেক্ট আছে)


এবার কিছু অসাধারণ ছবি দেখি (আমার তোলা না)





আজ এই পর্যন্তই। হ্যাপি প্যানিং!! 

মূল লেখাটি আছে এখানে

Wednesday, 15 February 2012

ক্যানন ৮৬০আইএস ৮ মেগাপ্রিক্সল কিছু প্রশ্নোত্তর

 http://static.trustedreviews.com/94%7ca2b656%7c0d80_6100-Canon860IS3quart.jpg

 ক্যানন ৮৬০আইএস ৮ মেগাপ্রিক্সল কিছু প্রশ্নোত্তর এখানে দেয়া হল। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন জোবাইর

আমার কিছু প্রশ্ন আপনার কাছে, আনেক অপশন আছে আসলে বেশীরভাগই জানিনা।
প্রশ্নসমূহ:
০১. আইএসও: হাই/আটো: কোনটা ভালো?
০২. সুপারফাইন/ফাইন/নরমাল: কোন অপশন ভালো, কাজ কি?

ডিজিটাল ক্যামেরা টিউটোরিয়াল (বেসিক)


ভূমিকা - ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে - Compact vs SLR - ফিচার/ফাংশন - ক্যামেরা কেনার আগে - ক্যামেরা কেনার পরে - অটোমুডে ছবি - শেষ কথা

সাধারণ মানের একটি ডিজিটাল ক্যামেরা এখন আর বিলাসদ্রব্য নয় বরং প্রাত্যহিক জীবনের অত্যাবশ্যকীয় একটি বস্তু। ডিজিটাল ক্যামেরা দিন দিন সুলভ হয়ে আসছে। হাজার দশেক টাকায় এখন বেশ ভালো ক্যামেরা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্রান্ডের ক্যামেরা দিনদিন সুলভ হচ্ছে এবং এর সাথে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ফীচার ও ফাংশন। তাই প্রতিদিন ডিজিক্যামের ব্যবহারকারীও বাড়ছে। নতুন/সাধারণ ব্যবহারকারী ও যারা নতুন ডিজিটাল ক্যামেরা কিনতে চান তাদের জন্য কমপ্যাক্ট ডিজিটাল ক্যামেরার বেসিক ফাংশন ও ফিচার নিয়ে এই লেখা।

ফটোগ্রাফি টিউটোরিয়াল (শেষ পোস্ট!)


ভূমিকা - কমপোজিশন - এক্সপোজার (Shutter Speeds, Apertures ISO) - Contrasts and colours - শেষ কথা

আগের পর্ব:
১। ডিজিটাল ক্যামেরা টিউটোরিয়াল (বেসিক)
২। কাছ থেকে দেখা ডিজিটাল ক্যামেরা

ডিজিটাল ক্যামেরার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ফিচার/ফাংশন সম্পর্কীত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভালো ছবি তোলার কিছু বেসিক কলা-কৌশল নিয়ে এখানে আলোচনা করব। ক্যামেরার অটোমুড/সীনমুড দিয়ে বিভিন্ন টেকনিক্যাল সেটিংয়ের সিদ্ধান্ত ক্যামেরার উপর ছেড়ে দেয়া গেলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় রয়েছে যা ফটোগ্রাফারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সঠিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করে ফটোগ্রাফারের জ্ঞান, পছন্দ, রুচি, ফ্যান্টাসি ও অভিজ্ঞতার উপর। যেমন ফটোর কম্পোজ, দূরত্ব, এঙ্গেল, পজিশন, ভিউপয়েন্ট, পোস, ওরিয়েন্টেশন, ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি। তাই সবক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন কোনটি সঠিক কোনটি ভুল।

কমপোজিশন
শট নেওয়ার জন্য কোন সাবজেক্ট নির্বাচন করার পর ভালো ফটোর জন্য আরো কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। যেমন সাবজেক্টটির উপরে, নিচে, ডানে, বামে কতটুকু এরিয়া ফ্রেমে আসবে, কোন পাশকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখা হবে, সাবজেক্টটর অবস্থান ফ্রেমের কোন জায়গায় হবে ইত্যাদি। কম্পোজ ফটোগ্রফির খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ ফটো তোলার পর গ্রাফিক প্রোগ্রামে এডিট করে কম্পোজের সেটিংগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কম্পোজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হল:

১। ইমেজে সাবজেক্টের অবস্থান: আমরা সাধারণত সাবজেক্টকে ভিউ ফাইন্ডারে প্রদর্শিত ফ্রেমের মাঝখানে রেখে সরাসরি সামনের থেকে ফটো তুলতে অভ্যস্থ। এতে ছবি হয় দ্বিমাত্রিক এবং আকর্ষণহীন। শট নেওয়ার আগে ফোকাস এরিয়াকে আপাতঃদৃষ্টিতে অনুভূমিক (horizontally) ও খাড়াভাবে (vertically) তিন অংশে বিভক্ত করুন।

সাবজেক্টকে লাইনগুলোর যে কোন ইন্টারসেকশন পয়েন্টে পজিশন করুন। ফটোগ্রাফিতে এই টেকনিককে Rule of thirds বলে। কোন কোন ক্ষেত্রে সাবজেক্টকে ডায়েগোনালি সেটিং করলে ছবি সুন্দর হয় ও ছোট ফ্রেমে বড় সাবজেক্ট কভার করা যায়।



২। সাবজেক্টের গুরুত্ব: আমরা ফটো তুলি সাধারণত কোন সাবজেক্টকে (ব্যক্তি, জীব, বস্তু) উদ্দ্যেশ্য করে। সুতরাং ফটোর অন্যান্য অংশের চেয়ে সাবজেক্টকে গুরুত্ব দিতে হবে বেশি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সাবজেক্টের চতুর্পাশ্বে খালি জায়গা রাখার ও বড় ব্যাকগ্রাউন্ড নেওয়ার দরকার নাই। যতটুকু সম্ভব সাবজেক্টের কাছে এসে ছবি তুলুন। জুম দিয়ে ক্লোজআপ করার পরিবর্তে কাছে গিয়ে শট নেওয়া ভালো। কাছে যাওয়া সম্ভব না হলেই জুম ব্যবহার করুন। শট নেওয়ার আগে ভিউ ফাইন্ডারে ফোকাস ফ্রেমের চারটি কর্নারে দেখুন গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে কিনা। যদি না থাকে সাবজেক্টের আরো কাছে এসে ব্যাকগ্রাউন্ড ছোট করে সাবজেক্ট দিয়ে ফ্রেম কভার করুন।

দূর থেকে শট নেওয়ার কারণে বামপাশের ছবিতে মেয়েটির চেহারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে না। কাছে গিয়ে শট নেওয়ায় ডানপাশের ছবিতে মেয়েটির ছবি অনেক পরিষ্কার ও জীবন্ত, সেইসাথে ব্যাকগ্রাউন্ড যতটুকু এসেছে তাতেই বুঝা যাচ্ছে এটা সমূদ্র সৈকত।

যখন কোন বিশেষ অনুভূতি, কোন ব্যাক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা কোন বস্তুর অংশ-বিশেষের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে ছবি তুলবেন তখন সেই বিশেষ অনুভূতির বাহ্যিক প্রকাশ, অঙ্গ/অংশটুকু ক্লোজআপ করে পুরো ফ্রেম কভার করে শট নিন। এতে বিশেষ অনুভূতি/সৌন্দর্য ও ইন্টিমেসি শতভাগ ফুটে উঠবে।

৩। ফটোতে ব্যাকগ্রাউন্ড নির্বাচন: ব্যাকগ্রাউন্ড যেন সাবজেক্ট থেকে বেশি উজ্জল বা এমন কোন রংয়ের না হয় যা সাবজেক্টকে ম্রিয়মান করে দেয়। সাবজেক্ট ও ব্যাকগ্রাউন্ডকে এমনভাবে পজিশন করতে হবে যেন ফটোতে একটা ত্রিমাত্রিক এফেক্ট আসে। সাবজেক্ট ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে দুরত্ব বৃদ্ধি করে শুধু সাবজেক্টের উপর ফোকাস করে গুরুত্বহীন ব্যাকগ্রাউন্ডের আকর্ষণ কমিয়ে আনা যায়।

বামপাশের ফটোতে ব্যাকগ্রাউন্ডে অপ্রত্যাশিত লোক ও মেয়েটির মাথার উপরে গাছটি ফটোর সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। ডান পাশের নিচের ফটোতে এক্সপোজের সাহায্যে depth of field (amount of in-focus distance) এডজাস্ট করে শুধু সাবজেক্টকে ফোকাস করে ব্যাকগ্রাউন্ডকে অস্পষ্ট করা হয়েছে।

৪। সঠিক ওরিয়েন্টেশন:

সাধারণত সাবজেক্টের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বা ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর ভিত্তি করে ফটোর ওরিয়েন্টেশনের (Horizontal/Vertical) সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোন কোন ক্ষেত্রে ফটো Horizontal ও Vertical উভয় ওরিয়েন্টেশনেই ভালো হতে পারে।

৫।Point of view:

কোন এঙ্গেল ও কোন পাশ থেকে শট নেবেন সেটাই ভিউপয়েন্ট। ফটোগ্রাফিতে ভিউপয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিউপয়েন্ট পরিবর্তন করে ফটোকে আরো আকর্ষণীয় ও ত্রিমাত্রিক করা যায়। এছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ডেও পরিবর্তন আনা যায়। সাবজেক্ট বা ক্যামেরা অথবা উভয়ের পজিশন পরিবর্তন করে বিভিন্ন ভিউপয়েন্ট সৃষ্টি করা সম্ভব।

৬। Photography Poses:

ফটোগ্রাফিতে সাবজেক্টের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মনোগত অনুভূতি, পারিপার্শিকতা ইত্যাদি প্রকাশের শারীরিক ভাষাকেই বলে পোস। সাবজেক্টের যথার্থ পোস সহকারে শট নিতে পারলে একটি ফটো অনেকসময় একটি গল্প, ডকুমেন্ট বা ইতিহাসের মত জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে।


৭।Framing
ফ্রেমিং হচ্ছে সাবজেক্টকে ইমেজের জ্যামিতিক আকারের অন্য অংশের মধ্যে আবদ্ধ করা। এতে সাবজেক্টের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং ফটোতে ত্রিমাত্রিক এফেক্ট ও গভীরত্ব বৃদ্ধি পায়।


এক্সপোজার
ফটোগ্রাফিতে "Exposure" বলতে ফিল্ম বা সিসিডি-তে কতটুকু আলো এসে পড়বে তাই বুঝায়। ফটোতে আলোর গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং ভালো ও সুন্দর ফটো তুলতে হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আলোকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল তথা এক্সপোজার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।যদিও বিষয়টা কিছুটা টেকনিক্যাল ও জটিল।পাওয়ার এন্ড শ্যুট ডিজিটাল ক্যামেরায় অটোমুডে ক্যামেরা নিজেই Exposure সেটিং করে, তারপরেও এই বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান থাকা ভালো। আর যদি এসএলআর ক্যামেরা হয় তবে অবশ্যই এ বিষয়ে জানতে হবে। আমরা যদি Exposure-কে একটি ত্রিভুজের সাথে তুলনা করি তবে ত্রিভুজটির তিনটি কোণ হচ্ছে: ISO, Aperture এবং Shutter Speed।


Auto Exposure: এই অপশনে ক্যামেরা নিজেই এক্সপোজার সেটিং করে আগেই বলেছি, তবে অটো এক্সপোজারের কলা-কৌশল বুঝলে একে প্রত্যক্ষভাবে ম্যানিপোলেশন করা সম্ভব। সাধারণত বেশিরভাগ আধুনিক ডিজিটাল ক্যামেরা ফোকাস এরিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে আলোর তথ্য সংগ্রহ করে (সেন্টার পজিশন থেকে বেশি তথ্য সংগ্রহ করে) সবগুলো তথ্যকে Average করে Exposure সেটিং করে। তথ্যগুলো সংগ্রহ করে শাটার বাটনকে অর্ধেক চাপ দেওয়ার মুহুর্তে। কোন ফটোকে অধিক আলোকিত করার জন্য ফটোর ফোকাস এরিয়া থেকে অধিক অন্ধকারময় আশেপাশের কোন জায়গা ভিউ ফাইন্ডারে সেন্টার ফোকাস করে শাটার বাটনকে অর্ধেক চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। শাটার বাটনকে ঠিক ঐ জায়গায় স্থির রেখে ক্যামেরা মুভ করে যে জায়গায় ছবি তুলবেন সেটা ভি্উ ফাইন্ডারে ফ্রেম করুন। এবার শাটার বাটনের বাকী অংশটুকু চাপ দিয়ে শট নিন। যেহেতু ক্যামেরা তুলনামূলকভাবে অন্ধকার জায়গার তথ্যের ভিত্তিতে এক্সপোজার সেটিং করেছে সেহেতু আপনার ছবিটা নিয়ম থেকে কিছুটা বেশি আলোময় ও উজ্জল হবে। আবার কোন ছবির উজ্জল আলোকে কিছুটা কমাতে ঠিক উল্টোভাবে অটো এক্সপোজার ম্যানিপোলেশন করতে পারেন। পরীক্ষা করে দেখুন, টেকনিকটা হয়তো কাজে লাগতে পারে। অটোমুডে ফটো তোলার সময় ফোকাস এরিয়াতে লক্ষ্য রাখবেন যেন সব জায়গায় আলোর পরিমাণ প্রায় একই হয়। তদি একপাশে রোদ, মাঝখানে ছায়া আরেক পাশে অন্ধকার এধরনের জটিল হয়, তবে অটো মুডের অ্যাপারচার সেটিং সঠিক নাও হতে পারে।


Manual Exposure: ম্যানুয়েল এক্সপোসার নিয়ে "ডিজিটাল ক্যামেরা টিয়টোরিয়েল" পর্বে কিছুটা আলোচনা করেছিলাম। এখানে আরো বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। Shutter Speed হচ্ছে শাটার বাটন চাপ দেওয়ার পর লেন্সের মাধ্যমে আলো প্রবেশের গোলাকার ছিদ্র বা জানালাটি কতোক্ষণ খোলা থাকবে, আর Apertures হচ্ছে আলো প্রবেশের গোলাকার জানালাটির সাইজ (ব্যাস) কত হবে তা নির্ধারণ করা।
Large aperture (জানালার সাইজ বড়) = small f number
Small aperture (জানালার সাইজ ছোট) = larger f number
Shutter Speed -এর সময়কে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে প্রকাশ করা হয়।
সাধারণ সূর্যালোকিত দিনে ক্যামেরার ভি্উ ফাইন্ডার বা ডিসপ্লেতে যদি '125 16' বা '500 8' প্রদর্শিত হয় তার প্রথম সংখ্যার অর্থ হচ্ছে: Shutter Speed ১২৫ ভাগের ১ সেকেন্ড অথবা ৫০০ ভাগের ১ সেকেন্ড আর ২য় সংখ্যাটিও একটি ভগ্নাংশ যার অর্থ হচ্ছে লেন্সের ফোকাল লেন্থকে গোলাকার জানালার ব্যাস দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল হয় ১৬ (80mm/5mm = f16) অথবা ৮ (160mm/20mm = f8)।

১। Apertures: অ্যাপারচার তথা 'গোলাকার খোলা জানালা'র সাইজকে f/number দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন: f/2.8, f/4, f/5.6,f/8,f/22 ইত্যাদি।এই নাম্বারের সিরিজ নির্বাচনে প্রতি ধাপে ছোট সংখ্যার দিকে গেলে জানালার সাইজ দ্বিগুণ করে বড় হবে আর বড় সংখ্যার দিকে গেলে প্রতি ধাপে অর্ধেক করে ছোট হবে। উল্ল্যেখ্য, শাটার স্পীড তথা 'জানালা খোলা থাকার সময়সীমা' ½ s – ¼ s – 1/8 s – 1/15 s – 1/30 s – 1/60 s – 1/125 s – 1/250 s – 1/500 s প্রতি ধাপে দ্বিগুণ করে বাড়ে বা অর্ধেক করে কমে। সুতরাং যদি অ্যাপারচার ভ্যালু এক ধাপ পরিবর্তন করে জানালার সাইজ অর্ধেক ছোট করা হয় এবং সেইসাথে শাটার স্পীডের ভ্যালু এক ধাপ পরিবর্তন করে জানালাটি খোলা রাখার সময় দ্বিগুণ করা হয় তাহলে প্লাসে মাইনাসে মিলে আলোর এফেক্ট আগের মতই থাকবে। এটাই Aperture এবং Shutter Speed এর পারষ্পরিক সম্পর্ক।
এদের প্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আরেকটি জিনিস পরিষ্কার হওয়া দরকার - Depth of Field। ফটোগ্রাফীতে ডেফথ অফ ফিল্ড বলতে বুঝায় ছবির কতটুকু দূরত্ব বা পরমাণ ফোকাসের আওতায় আসবে তা নির্ধারণ করা। Large depth of field বলতে বুঝায় ছবির সাবজেক্ট ও সাবজেক্টের কাছের ও দূরের প্রা্য সবকিছুই ফোকাসে আসবে। এভাবে ছবির Depth of Field বাড়াতে হলে Aperture তথা 'গোলাকার খোলা জানালা'র সাইজ ছোট করতে হবে অর্থাৎ f/number বড় হবে।

বাম পাশের ফুলের শট নেওয়া হয়েছে aperture f/2.8 দিয়ে, ফলাফল Small depth of field, শুধু ফুলটি ফোকাসের মধ্যে এসেছে, এর পেছনের কিছু আসে নাই। ডান পাশের শট নেওয়া হয়েছে aperture f/16 দিয়ে। ফলাফল Large depth of field, কাছের ও দূরের সবকিছুই ফোকাসের আওতায়। শুনতে কিছুটা অযৌক্তিক হলেও মনে রাখার চেষ্টা করুন:
Large Aperture = Large Hole = Low Number = Small Depth Small Aperture = Small Hole = High Number = Large Depth
আমরা এখন বলতে পারি, Depth of Field নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপর: সাবেজক্ট থেকে ক্যামেরার দুরত্ব ও Aperture সেটিং।

২। Shutter Speed: আমরা জানি শাটার স্পীড ও অ্যাপারচার দুটোই আলোর পরিমান কমানো-বাড়ানোর টুলস। Aperture আলো প্রবেশের ছিদ্র ছোট-বড় করে আর Shutter Speed আলো প্রবেশের ছিদ্রটি অল্প-বেশি সময়ের জন্য খোলা রেখে আলোর পরিমান নিয়ন্ত্রন করে। সাবজেক্ট যেখানে গতিশীল সেখানে Aperture-এর পরিবর্তে Shutter Speed দিয়ে আলোর পরিমান নিয়ন্ত্রন করা হয়। সাধারণত চলন্ত গাড়ি, খেলাধুলা, শিশুদের দৌড়-ঝাপের শট fast shutter speed-এ নিলে ফটো ভালো হয়।

সাইকেল চালানো অবস্থায় বালকটির ফটো দ্রুত শাটার স্পীড সেটিং ও সাইকেলকে টার্গেট করে ক্যামেরা মুভ করে উঠানো হয়েছে। তাই ব্যাকগ্রাউন্ড ঝাপসা হয়েছে। সেটাই ভালো, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে অপ্রত্যাশিত কিছু এসে সাবজেক্টের আকর্ষণ নষ্ট করার সম্ভাবনা নাই। দ্রুত ও ধীর গতির শাটার স্পীডের পার্থক্য বুঝার জন্য নিচের ছবিটি দেখুন:

একই ফোয়ারার দুটি ছবি। বাম পাশের ছবিটি দ্রুত শাটার স্পীডে শট নেওয়া - ৫০০ ভাগের ১ সেকেন্ডের জন্য লেন্সের মধ্য দিয়ে সেন্সরে আলো প্রবেশের ছিদ্রটি খোলা ছিল। পানির প্রতিটি বিন্দু বাতাসে ভাসমান অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। ডান পাশের ছবিটি স্লো শাটার স্পীডে (৩০ ভাগের ১ সেকেন্ড) তোলা হয়েছে। উল্লেখ্য, স্লো শাটার স্পীডের সময় ক্যামেরা ট্রিপড বা কোন কিছুর উপর রেখে শট নেওয়া ভাল। অন্যথায় হাত কেঁপে ছবি ঝাপসা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৩। ISO (Sensitivity): ডিজিটাল ক্যামেরায় CCD বা CMOS সেনসর কতখানি সংবেদনশীল বা আলোর স্পর্শে কত তাড়াতাড়ি রিয়্যাক্ট করবে তা ISO সংখ্যা দিয়ে নির্ধারণ করা হয়। Low ISO Rating -এর অর্থ এটা কম সংবেদনশীল অর্থাৎ যথার্থ এক্সপোজারের জন্য বেশি আলোর প্রয়োজন হবে। High ISO Rating -এর বেলায় হবে ঠিক উল্টো। সাধারণত ISO 100 - ISO 400 ব্যবহার হয় বেশি। ISO Rating যত বেশি হবে ক্যামেরা কম আলোর ছবি তত বেশি ভালো তুলতে পারবে। তা ছাড়া দ্রুত শাটার স্পীডে শট নেওয়ার সময়ও ISO Rating বেশি রাখতে হয়। High ISO Rating -এর নেতিবাচক দিক হচ্ছে ফটোতে কিছুটা 'noise' -এর সৃষ্টি হয়।

একই ফটো - তিন রকমের ISO (100, 400, 1600) দিয়ে শট নেওয়া।

৪। Contrasts and colours: Contrast বলতে কোন ছবির brightest এবং darkest রংয়ের ঘণত্বের পার্থক্যকে বুঝায়।

আলোর উৎস, পরিমাণ, বিন্যাস এবং সঠিক এক্সপোজের সমন্বয়েই সম্ভব Balance contrast and color।

শেষ কথা: প্রয়োজন ছাড়া ম্যানুয়েল এক্সপোজার ব্যবহার না করাই ভালো। লেটেস্ট মডেলের ক্যামেরা অটোমুডে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক এক্সপোজ করে। যদি ফটো আপনার মনের মত না হয় তখন এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারেন। এসএলআর ক্যামেরা হলে কথাই নেই, ইদানিং লেটেস্ট কমপ্যাক্ট ক্যামেরাতেও আংশিক ম্যানুয়েল এক্সপোজারের সুবিধা থাকে। কোন নির্দিষ্ট ISO, Aperture এবং Shutter Speed-ভ্যালুতে আপনার ক্যামেরাতে একটি ফটো যে কোয়ালিটির উঠেছে, আরেকজনের ক্যামেরায় একই এক্সপোজার ভ্যালুতে ফটোটি একই কোয়ালিটির হবে তেমন কোন গ্যারান্টি নাই। ক্যামেরার মডেল, ফিচার ও লেন্সের উপর ভিত্তি করে এক্সপোজার ভ্যালু একই হলেও ফটোর কোয়ালিটির তারতম্য হতে পারে।
আশা করি ক্যামেরা ও ফটোগ্রাফির বেসিক কলা-কৌশল নিয়ে লেখা আমার এই তিনটি পর্ব ক্যামেরার নতুন ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাজে আসবে।

অফ টপিক: Somewhereinblog-এর বর্তমান পরিবেশে আপাতত এটাই আমার শেষ লেখা।সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন।
------------------------------------------------------
তথ্য ও ছবিসূত্র:
Understanding Exposure by Bryan Peterson
http://digital-photography-school.com
http://www.geofflawrence.com/index.htm
40 Digital Photography Techniques by John Kim
ইন্টারনেট ও পত্র-পত্রিকা

মূল লেখা এখানে

Thursday, 29 December 2011

যারা পোরট্রেইট ছবি তুলতে ভালোবাসেন।


যারা পোট্রেইট ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাদের লাইট এন্ড শাডোর কাজগুলো একটু ভালোমত জানা থাকার দরকার। আগেই বলে রাখি টিপস এন্ড ট্রিক্স এর সাথে পারসোনাল অভিজ্ঞতাও শেয়ার করা হইবেক। আচ্ছা আগে কয়েক টা ছবি দেখে আসি।

১।
২।
৩।
৪।

এই ছবিগুলার কমন বিষইয়গুলা খেয়াল করেন একটু। সবগুলাতেই আলো আধারির পুর্ন সুযোগ কাজে লাগানো হয়েছে। সবগুলা ছবির এক দিক ব্লার এবং একদিক ফোকাসড। এবার আসি আসল কাহিনীতে, কেমনে তুলতে হয় এইরাম ছবি।
সবচেয়ে ইম্পরটেন্ট ব্যাপার হলো আপনার সাব্জেক্ট কে জায়গামত বসানো। আপনি যদি ন্যাচেরাল লাইট (যেমন উইন্ডলাইট) কে কাজে লাগাতে চান, তাহলে সাব্জেক্ট কে জানালার পাশে এক্টু কোনা হয়ে বসতে দিন। তার মানে পুরোপুরি ক্যামেরার দিকে মুখ করে না, আবার পুরাপুরি জানালার দিকেও মুখ করে না। জানালার থেকে আলো এসে যেন মুখের একপাশে পড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই তাহলে মুখের আরেকপাশ কিছুটা অন্ধকারে থাকবে।
ধরে নিচ্ছি আপনি ডিএসএলার ব্যাবহার করেন। তাহলে এই আলো আধারি থেকে আপনার কাঙ্খিত ছবিটি বের করে আনার জন্য কাজে লাগাতে হবে এক্সপোজার চাচাকে।

কেমেরা সেটিং এ আসার আগে আমার তোলা কয়েকটা আমেচার ছবি দেখাই। আসলে এই ছবিটা তোলার পরেই এই ধরনের ছবি তোলার আগ্রহটা বেড়ে গেছে।
১। এই ছবিটাকে আমরা এক্সাম্পল হিসেবে ব্যাবহার করবো।

২।
৩।

সময়ঃ আমি ছবিটা তুলেছিলাম রাতে। কিন্তু আমি আলাদা লাইট ব্যাবহার করেছিলাম। লাইট ম্যানিপুলেশন না করলে আপনারা চেস্টা করবেন দুপুর বিকালের মাঝামাঝি সময়ে ছবি তোলার। এই টাইমের রোদটা অনেক জোস ছবি তোলার জন্য।

লোকেশনঃ চেস্টা করুন জানালার বা দরজার পাশে সাব্জেক্ট কে বসানোর। মুখের একপাশে যেনো অবশ্যি আলো পড়ে।

ক্যামেরা সেটিংঃ ফুল ম্যানুয়াল মুডে নিয়া আসুন। লেন্সও ম্যানুয়ালি রাখুন। ছবি তোলার সময় মুখের আলোকিত অংশটুকু ফোকাস করুন। চেষ্টা করুন রুল অফ থার্ড ফলো করতে।

শাটার স্পিডঃ আমি ছবিটা তোলার সময় শাটার স্পিড ছিলো ১/১২০। আমার লাইট টা খুব জোরালো থাকায় শাটার স্পিড বেশি দিতে হয়েছিলো,যাতা অতিঅল্প সময়ে সে ছবিটা নিয়ে নিতে পারে।আলো যেনো বেশি ঢোকার চান্স না পায়। অবশ্যই ক্যামেরার ফ্লাশ ব্যাবহার করবেন না। এতে আলোর ব্যলেন্সটা থাকবে না। ন্যেচেরাল লাইটে ছবি তোলার সময় শাটার স্পীড কমিয়ে আনুন যাতে ইমেজ সেন্সর আলোকিত অংশটুকু বেশি সময় ধরে ক্যপচার করে রাখতে পারে।(লাইট যদি সফট হয়)।

আইএসওঃ আপনারা চেস্টা করবেন আইএসও যতটা সম্ভব কম রাখা যায়। কারন,এই ছবি তোলার জন্য খুব বেশি আলোর দরকার নাই। স্পেশালি মুখের একপাশ টাতো অন্ধকারেই রাখতে হবে, তাই না? আমার ছবিটা তোলার সময় আইএসও ছিলো লো তে।

এপারেচারঃ এপারেচারের কাজ হলো কেমেরায় কতটুকু আলো ঢুকবে সেইটা ঠিক করা। শাডো পোট্রেট তুলতে হলে আপনাকে এপারেচার ছোটো করতে হবে(এপারেচার ভালু বাড়াতে হবে) যেনো শুধুমাত্র মুখের আলোকিত অংশটুকু থেকে সে আলো পায়। তাহলে অন্ধকার অংশটুকু সে কাউন্ট করবে না। ভালো কথা এপারেচার আর এপারেচার ভ্যলু কিন্তু গোলায়া ফেইলেন না। আমার পিকটা তোলার সময় এপারেচার ছিল f/11।

তাইলে কি বুঝা গেলো? লাইট এন্ড শাডো পোরট্রেইট ফটোগ্রাফির জন্য কম্বিনেনেশন টা হবে অনেকটা এই রকম- স্ট্রং বাট সফট লাইট, বেশি শাটার স্পিড, কম আইএসো , বেশি এপারেচার ভ্যালু। তাইলে শুরু করে দেন এক্সপেরিমেন্ট আর আপ্লোড করুন ।

মূল পোস্ট

ফটোগ্রাফি বিষয়ে ছোট ছোট কয়েকটা জিনিস

যে সব নবীন ফটোগ্রাফার ভাই ও বোনেরা ফটোগ্রাফি বিষয়ে বিশেষ করে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার নানা রকম সেটিংস ও অন্যান্য জটিল বিষয় নিয়ে ঝামেলায় পড়ে,,,
( যেমন - আইএসও , সার্টার স্পিড , এক্সপোজার অ্যাপারচার বা এফ স্টপ,, আরও নানা জিনিস ) আমার মত করে মাথার চুল ছিঁড়ছেন একটা একটা করে ... তাদের মাথায় টাক পড়ে যাবার আগেই এই জিনিস গুলো একটু দেখতে পারেন .....

কাজে লাগলেও লাগতে পারে......

#১# যারা ক্যামেরার শাটার প্রায়োরিটি মুডে ছবি তোলেন তারা
এধরনের ছবি তুলতে বা এমন করে অ্যাকশন ফ্রিজ করতে ..
ক্যামেরার শাটার স্পিড ১/২৫০সে. | ১/৫০০সে. | ১/১০০০সে. বা তার বেশি রাখতে পারেন ,,, তবে এর বেশি আর না হলেও চলবে ,,,,,,,,
আর এই মুডে আপনার শাটার স্পিড সিলেক্ট করে দিলে ক্যামেরা অটোমেটিক তার আইএসও/অ্যাপারচার বা এফ স্টপ/এক্সপোজার/অ্যাডজাস্ট করে নেবে ...।

#২# যারা গতিশীল বস্তুকে

এই ছবিটার মত সাবজেক্ট কে ফোকাসে স্টিল রেখে বাকি সব হাওয়া করে দিতে চান ,, বা ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার্ড বা প্যানিং অ্যাকশন ফটোগ্রাফি করতে চান তাদের জন্য স্লো শাটার স্পিড বেছে নিতে হবে .... আর তা ১/৬০সে. | ১/৩০সে. | ১/১৫সে. এই শাটার স্পিড ...... :)

#৩# যারা তরল পানি হঠাৎ করে সবার সামনে বরফ বানিয়ে ফেলতে চান আপনার ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের জন্য সব থেকে ভাল হলো ভয়ংকর স্লো শাটার স্পিড ....
আর সেটা ১/৪সে. | ১/২সে. | ১সে. বা তারও কম যদি থাকে ......।
তো নবীন ফটোগ্রাফার ভাই ও বোন হাতে তুলে নিন আপনার ডান্ডাওয়ালা বা পয়েন্ট এন্ড শুট ডিজিটাল ক্যামেরা ,,, আর মোড ডায়াল ঘুরিয়ে শাটার প্রায়োরিটি বা (S) মোড সিলেক্ট করে শুরু করে দিন প্র্যাক্টিস অথবা উপরের ঐ কথা গুলো আসল না নকল তার পরীক্ষা  

( বিঃদ্রঃ- এই শাটার স্পিড গুলোকে বলতে পারেন চিরন্তন শাটার স্পিড ,,, বা সব থেকে কার্যক্ষম শাটার স্পিড ,, এগুলো মেনুয়েল মুডেও ইউজ করা হয় তবে সেখানে অ্যাপারচার বা এফ স্টপ নাম্বার আপনাকেই সিলেক্ট করে দিতে হয় ....)


মূল পোস্ট

ডিএসএলআর ক্যামেরা - জিনিসটা কি?



নেকদিন পর ফিরে এলাম। দুঃখিত এতদিন ধরে কোন পোষ্ট না দিতে পারার কারনে। এবার ডিএসএলআর নিয়ে লিখব বলে ভেবেছি। ডিএসএলআর আর কমপ্যাক্ট ক্যামেরার মধ্যে মূলত কি পার্থক্য, আর একটি ডিএসএলআর এর গঠন প্রকৃতি, এসবকিছু নিয়েই লিখব, কারন পূর্ববর্তী অনেক পোষ্টে ফটোগ্রাফী নিয়ে আলোচনা হলেও ডিএসএলআর এর গঠন নিয়ে কখনও আলোচনা করা হয়েছে বলে মনে পড়েনা।
পোষ্টটির সূচনা মূলত এই ব্লগটির কমেন্ট থেকে। তো- আসুন শুরু করা যাক।
প্রথমেই প্রশ্ন আসতে পারে, ক্যামেরা তো ক্যামেরাই। এর মাঝে ডিএসএলআর এর আবার বাহাদুরীটা কোথায়? আমি প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা কিনি ২০০৫ এর শেষের দিকে, পুরোপুরি কমপ্যাক্ট ছিলো ওটা, পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরাও বলতে পারেন। এরপর ২০০৮ এর শেষের দিকে কিনি হাই এন্ড কমপ্যাক্ট (হাইপার জুম ও অনেক বেশী ফাংশন সম্বলিত কমপ্যাক্ট ক্যামেরা) এগুলোকে ব্রিজ ক্যামেরা ও বলে অনেকে। আমার এক বন্ধু কেনেন ডিএসএলআর (ব্লগার জোনায়েদ ভাই, যদিও বর্তমানে উনি নতুন আরেকটি ডিএসএলআর কেনার পাঁয়তারা করছেন) আর আমি সেই হাই এন্ড (ওটাই নিয়েছিলো প্রায় ৫০০ ডলারের মতন!) দুটো ক্যামেরাই ছিলো সেই তখন ১০ মেগাপিস্কেলের। ছবি তোলার পর দেখতাম, একই ছবির ডিএসএলআর এ তোলা আর ওই হাই এন্ড ক্যামেরায় তোলা ছবির মধ্যে বেশ তফাৎ। আর তখন আমি ক্যামেরা নিয়ে পড়াশুনা একটু একটু শুরু করি আর অচিরেই একটি ডিএসএলআর কিনি (স্কলারশিপের টাকার শ্রাদ্ধ করে ২ টি দামী ক্যামেরা!)। একটি ডিএসএলআর এর গঠন চিত্র দেখুনঃ

ছবিটি নেয়া হয়ে হয়েছে এই সাইট থেকে।
প্রথমেই দেখুন এলসিডি ডিসপ্লে, আগেকার ডিএসএলআর গুলোয় লাইভ ভিউ দেখা যেত না। এখন প্রযুক্তি এত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, পুরোই লাগাম ছাড়া! এর পর আছে সেন্সর, বলতে পারেন যে কোন ডিজিটাল ক্যামেরার হার্ট স্বরূপ। ক্ল্যাসিকাল ফিল্ম ক্যামেরা গুলোর যেমন ফিল্ম, ডিজিটাল ক্যামেরা গুলোর হল সেন্সর। মেমরী কার্ড, ব্যাটারি আর ফ্ল্যাশের পর আছে শাটার। শাটার স্পিড কমিয়ে-বাড়িয়ে ছবি তোলার অনেক মুন্সিয়ানা করা যায় সাথে আছে আইএসও সহ আরও অনেক অনেক বিষয়, ওগুলো এখন সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছি আপাতত। এর পরেই আছে লেন্স, ডিএসএলআর এর অনেক সুবিধার একটি হল লেন্স পরিবর্তন করে নানা বিন্যাসের পটভূমির জন্য আপনি বিভিন্ন প্রকারের লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন যা কিনা কমপ্যাক্ট বা হাই-এন্ড কমপ্যাক্ট ক্যামেরা গুলোতে সুযোগ নেই। আবার হাই এন্ড ক্যামেরার সুযোগ হল, ডিফল্ট ভাবে ওখানে বেশ ভালো ম্যাগনিফিশনের লেন্স লাগানো থাকে।

একটি ডিএসএলআর এর ব্যাবচ্ছেদ চিত্র (উইকি থেকে)

প্রশ্ন আসতে পারে, হাই এন্ড ক্যামেরার অনেক সুযোগ (যেমন লেন্স চেইঞ্জের ঝামেলা নেই, আবার আমার হাই এন্ড ক্যামেরার জুম ছিলো ২০X বা প্রায় ৪০০ মিমি লেন্সের কাছাকাছি প্রায়, আর ডিএসএলআর এর এই টেলিস্কোপিক লেন্স কিনতে গেলে আমার তিন মাস না খেয়ে থাকতে হবে (যদিও পরে একটা ৩০০মিমি-র লেন্স কিনেছি :P ), তাহলে কেন আমি আবার ডিএসএলআর কিনলাম? কারন ওই যে বললাম, ডিটেইল ইমেজ কোয়ালিটি, খুব দ্রুত ফোকাস করে ছবি তোলার সুবিধা আরও যে কত সুবিধা ওগুলো বাদ দিয়ে ডিটেইল ইমেজ এর ব্যপারটায় আসি, আর সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে সেন্সরের ওপর। তার আগে একটু কমপ্যাক্ট/হাইএন্ড আর এসএলআর এর ওয়ার্কিং প্রিন্সিপলটা দেখি, কেন প্রাথমিক যুগের এসএলআর গুলোতে লাইভ ভিউ দেখা যায়নি আর কেন এখনকার যুগের হাই এন্ড ক্যামেরতে লাইভ ভিউ থাকলেও ডিএসএলআর এর সাথে মূল পার্থক্যটা কোথায়?
নিচের ছবিটা দেখুন, একটি হাই এন্ড কমপ্যাক্ট ক্যামেরার ফাংশন দেখানো হয়েছে।
কমপ্যাক্ট ক্যামেরাগুলোতে আমরা সত্যিকার অর্থে বাস্তব চিত্র দেখতে পাইনা, কারন আলো লেন্স হয়ে সেন্সর (বা ফিল্মে) যায় তখন সেন্সর থেকে উত্তেজিত ইলেক্ট্রনগুলোর সিগনাল থেকে লাইভ ভিউ রিট্রিভ করা হয়। তার মানে আমরা ভিউফাইন্ডার বা লাইভ ভিউ যা দিয়েই কমপ্যাক্ট ক্যামেরা/হাইএন্ড কমপ্যাক্ট দেখিনা কেন সেগুলো আমরা সরাসরি রিয়েল ভিউ না দেখে বিবর্ধিত মডিফায়েড ভিউ দেখি। এবার ডিএসএলআর এর কথায় আসা যাক, দেখুন ডিএসএলআর এর ওয়ার্কিং ফাংশনঃ

আমরা ক্যামেরার সামনে লেন্স দিয়ে প্রতিফলিত ইমেজ সরাসরি ভিউফাইন্ডার দিয়ে দেখতে পাই। প্রশ্ন থাকতে পারে, এতে লাইভ ভিউ দেখাতে কি সমস্যা, সমস্যাটি হল এই জায়গায়ঃ

ছবি তুলবার সময় রিফ্লেকটর (সোজা কথায় আয়নাটি) সরে যায় আর তাই লাইভ ভিউ পাওয়াটা প্রাথমিক পর্যায়ে সম্ভব ছিলোনা। অলিম্পাস সর্বপ্রথম লাইভ ভিউ সম্বলিত এসএলআর ক্যামেরা ই-১০ বাজারে নিয়ে আসে যা রীতিমতন বিপ্লব বটে। কিভাবে সম্ভব হল এটা, প্রশ্ন আসতে পারে। তারা বেশ মজার একটি কাজ করেছে আর তা হল, তারা এসএলআর এর মধ্যে কমপ্যাক্ট ক্যামেরার ফাংশন যোগ করেছে। অর্থাৎ, যখন ভিউফাইন্ডার থেকে আপনি লাইভ ভিউতে সুইচ করবেন তখন ক্যামেরার রিফ্লেকটরটি ম্যুভ করবে বা সরে গিয়ে আপনার ক্যামেরাকে সরাসরি একটি কমপ্যাক্ট ক্যামেরা বানিয়ে দেবে। বিশ্বাস হয় না? আপনার ডিএসএলআর এর লাইভ ভিউ অন করে ভিউফাইন্ডারে চোখ রেখে দেখুন, কিচ্ছু দেখতে পারবেন না, পুরোটাই কালো। অনেক দামী ডিএসএলআর-এ লাইভ ভিউ-এ সুইচ করার সাথে সাথে সেকেন্ডারি আরেকটা সেন্সর ছবি ক্যাপচার করে ওভার হিটিং এড়ানোর জন্য, কারন লাইভ ভিউতে ফোকাস চেঞ্জ করার সাথে সাথে ক্যামেরার সেন্সরকে অনেক ডাটা প্রসেস করে লাইভ ভিউতে প্রদর্শন করতে হয়, এতে সেন্সরের ওপর বেশী চাপ পড়ে। তাই, লাইভ ভিউ এর কথা যদি বলা হয় তাহলে বলা যাবে যে, ডিএসএলআর একাধারে দ্বৈতস্বত্তা পালন করছে যা কমপ্যাক্ট বা হাই এন্ড ক্যামেরা কখনোই পারবেনা।


এসএলআর এর পাঁচ কোনা প্রিজম, যা দিয়ে বাহির থেকে আসা আলো (ছবি) প্রতিফলনের মাধ্যমে সরাসরি ভিউফাইন্ডারে দেখা যায়।

এবার আসি সেন্সর প্রসঙ্গে। ওই যে বলেছিলাম, আমি আর আমার বন্ধু দুজনেই একই মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললেও তার এসএলআর [অলিম্পাস ই-৪২০] এর ছবি আমার হাই এন্ড ক্যামেরার [অলিম্পাস এসপি ৫৭০ ইউজি] চেয়ে অনেক গুনে ভালো এসেছিলো। কেন? ধরাযাক, লুমিক্সের [এফজি ১০০ মডেলের] একটি হাই-এন্ড ক্যামেরার কথা,গুগলে সার্চ দিয়ে দেখুন ওটার সেন্সরের সাইজ হল ১/২.৩৩ ইঞ্চি বা ২৪ বর্গমিলি-র মতন। সব কমপ্যাক্ট বা হাই এন্ড ক্যামেরার সেন্সর এরকম হয়, খুব বেশী হলে বড়জোড় ৪৫ বর্গমিলি হতে পারে, এর বেশী না। কিন্তু দেখবেন সেগুলোই কিনা ২৫-৩০ মেগা পিক্সেল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ডিএসএলআর এর সেন্সর অনেক অনেক গুণে বেশী সমৃদ্ধ। নিচের ছবিটা দেখলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে। ছবিটার একদম নিচের সারিটা হল কমপ্যাক্ট/হাই এন্ড ক্যামেরার জন্য। বাকি গুলো ডিএসএলার আর জন্যঃ যেমন, 4/3 টেকনলজি চলে আসছে অনেক কাল হল ডিএসএলআরে। আমার পুরোনো সস্তা ডিএসএলআরো 4/3 সেন্সর প্রযুক্তির। সেটাই ডিএসএলআর এর সবথেকে ছোট সাইজের সেন্সর বলা যায়, মাত্র ২২৫ বর্গ মিমি।

(ছবিটা উইকি থেকে প্রাপ্ত)। আর তাই বলা যায়, ডিএসএলআর এর তুলনা শুধু সে-ই।
১৯৭৫ সালে কোডাকের ইঞ্জিনিয়ার স্টিভেন ডিজিটাল ক্যামেরার প্রযুক্তি আবিস্কারের পর থেকে এর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। আগে চার্জড কাপলড ধরনের সেন্সর ব্যবহৃত হত, এখন মেটাল অক্সাইড সেমিকন্ডাকটর ধরনের সেন্সর ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক সুবিধার মধ্যে বড় সুবিধাটি হল, ব্যাটারির চার্জ সাশ্রয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আর ক্যামেরা হয়েছে অনেক সস্তা ও ফ্লেক্সিবল। আর প্রথম ফুল-ফাংশনড ডিএসএলআর বাজারে আসে কোডাকের ডিসিএস-১০০, ১.৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেই ১৯৯১ সালে। তার আগের সবগুলি ছিলো এসএলআর অর্থাৎ ফিল্ম ক্যামেরা।
এখন, কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন ক্যানন , নাইকন , অলিম্পাস , লেইকা , ফুজি , সনি , পেনট্যাক্স বা স্যামসাং এদের মধ্যে কোনটি সবথেকে ভালো তাহলে উত্তর হবে, সবগুলোই সাড়ে উনিশ, বিশ, সাড়ে বিশ, কোনটার মধ্যেই আকাশ পাতাল তফাৎ নেই, কিন্তু তফাৎ আছে মডেলে। যদিও আমি অলিম্পাসের ডিএসএলআর ব্যাবহার করি, কিন্তু ক্যাননের ওপর আমার দুর্বলতা আছে (কেন আছে জানিনা, শুধু মনে আছে ছোট বেলায় বাবা একবার বলেছিলেন যে ক্যাননের ক্যামেরা ভালো আর তাই ওটাই মাথায় বসে আছে)।