অনেকদিন
পর ফিরে এলাম। দুঃখিত এতদিন ধরে কোন পোষ্ট না দিতে পারার কারনে। এবার
ডিএসএলআর নিয়ে লিখব বলে ভেবেছি। ডিএসএলআর আর কমপ্যাক্ট ক্যামেরার মধ্যে
মূলত কি পার্থক্য, আর একটি ডিএসএলআর এর গঠন প্রকৃতি, এসবকিছু নিয়েই লিখব,
কারন পূর্ববর্তী অনেক পোষ্টে ফটোগ্রাফী নিয়ে আলোচনা হলেও ডিএসএলআর এর গঠন
নিয়ে কখনও আলোচনা করা হয়েছে বলে মনে পড়েনা।
পোষ্টটির সূচনা মূলত
এই ব্লগটির কমেন্ট থেকে। তো- আসুন শুরু করা যাক।
প্রথমেই প্রশ্ন আসতে পারে, ক্যামেরা তো ক্যামেরাই। এর মাঝে ডিএসএলআর এর
আবার বাহাদুরীটা কোথায়? আমি প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা কিনি ২০০৫ এর শেষের
দিকে, পুরোপুরি কমপ্যাক্ট ছিলো ওটা,
পয়েন্ট এন্ড শ্যুট
ক্যামেরাও বলতে পারেন। এরপর ২০০৮ এর শেষের দিকে কিনি হাই এন্ড কমপ্যাক্ট
(হাইপার জুম ও অনেক বেশী ফাংশন সম্বলিত কমপ্যাক্ট ক্যামেরা) এগুলোকে
ব্রিজ ক্যামেরা ও বলে অনেকে। আমার এক বন্ধু কেনেন ডিএসএলআর (ব্লগার
জোনায়েদ
ভাই, যদিও বর্তমানে উনি নতুন আরেকটি ডিএসএলআর কেনার পাঁয়তারা করছেন) আর
আমি সেই হাই এন্ড (ওটাই নিয়েছিলো প্রায় ৫০০ ডলারের মতন!) দুটো ক্যামেরাই
ছিলো সেই তখন ১০ মেগাপিস্কেলের। ছবি তোলার পর দেখতাম, একই ছবির ডিএসএলআর এ
তোলা আর ওই হাই এন্ড ক্যামেরায় তোলা ছবির মধ্যে বেশ তফাৎ। আর তখন আমি
ক্যামেরা নিয়ে পড়াশুনা একটু একটু শুরু করি আর অচিরেই একটি ডিএসএলআর কিনি
(স্কলারশিপের টাকার শ্রাদ্ধ করে ২ টি দামী ক্যামেরা!)। একটি ডিএসএলআর এর
গঠন চিত্র দেখুনঃ
ছবিটি নেয়া হয়ে হয়েছে
এই সাইট থেকে।
প্রথমেই দেখুন এলসিডি ডিসপ্লে, আগেকার ডিএসএলআর গুলোয় লাইভ ভিউ দেখা যেত
না। এখন প্রযুক্তি এত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, পুরোই লাগাম ছাড়া! এর পর
আছে সেন্সর, বলতে পারেন যে কোন ডিজিটাল ক্যামেরার হার্ট স্বরূপ।
ক্ল্যাসিকাল ফিল্ম ক্যামেরা গুলোর যেমন ফিল্ম, ডিজিটাল ক্যামেরা গুলোর হল
সেন্সর। মেমরী কার্ড, ব্যাটারি আর ফ্ল্যাশের পর আছে শাটার। শাটার স্পিড
কমিয়ে-বাড়িয়ে ছবি তোলার অনেক মুন্সিয়ানা করা যায় সাথে আছে আইএসও সহ
আরও অনেক অনেক বিষয়, ওগুলো এখন সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছি আপাতত। এর পরেই আছে
লেন্স, ডিএসএলআর এর অনেক সুবিধার একটি হল লেন্স পরিবর্তন করে নানা
বিন্যাসের পটভূমির জন্য আপনি বিভিন্ন প্রকারের লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন
যা কিনা কমপ্যাক্ট বা হাই-এন্ড কমপ্যাক্ট ক্যামেরা গুলোতে সুযোগ নেই। আবার
হাই এন্ড ক্যামেরার সুযোগ হল, ডিফল্ট ভাবে ওখানে বেশ ভালো ম্যাগনিফিশনের
লেন্স লাগানো থাকে।
একটি ডিএসএলআর এর ব্যাবচ্ছেদ চিত্র (উইকি থেকে)
প্রশ্ন আসতে পারে, হাই এন্ড ক্যামেরার অনেক সুযোগ (যেমন লেন্স চেইঞ্জের
ঝামেলা নেই, আবার আমার হাই এন্ড ক্যামেরার জুম ছিলো ২০X বা প্রায় ৪০০
মিমি লেন্সের কাছাকাছি প্রায়, আর ডিএসএলআর এর এই টেলিস্কোপিক লেন্স কিনতে
গেলে আমার তিন মাস না খেয়ে থাকতে হবে (যদিও পরে একটা ৩০০মিমি-র লেন্স
কিনেছি
), তাহলে কেন আমি আবার ডিএসএলআর কিনলাম? কারন ওই যে বললাম, ডিটেইল ইমেজ
কোয়ালিটি, খুব দ্রুত ফোকাস করে ছবি তোলার সুবিধা আরও যে কত সুবিধা ওগুলো
বাদ দিয়ে ডিটেইল ইমেজ এর ব্যপারটায় আসি, আর সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে
সেন্সরের ওপর। তার আগে একটু কমপ্যাক্ট/হাইএন্ড আর এসএলআর এর ওয়ার্কিং
প্রিন্সিপলটা দেখি, কেন প্রাথমিক যুগের এসএলআর গুলোতে লাইভ ভিউ দেখা
যায়নি আর কেন এখনকার যুগের হাই এন্ড ক্যামেরতে লাইভ ভিউ থাকলেও ডিএসএলআর
এর সাথে মূল পার্থক্যটা কোথায়?
নিচের ছবিটা দেখুন, একটি হাই এন্ড কমপ্যাক্ট ক্যামেরার ফাংশন দেখানো হয়েছে।
কমপ্যাক্ট ক্যামেরাগুলোতে আমরা সত্যিকার অর্থে বাস্তব চিত্র দেখতে পাইনা,
কারন আলো লেন্স হয়ে সেন্সর (বা ফিল্মে) যায় তখন সেন্সর থেকে উত্তেজিত
ইলেক্ট্রনগুলোর সিগনাল থেকে লাইভ ভিউ রিট্রিভ করা হয়। তার মানে আমরা
ভিউফাইন্ডার বা লাইভ ভিউ যা দিয়েই কমপ্যাক্ট ক্যামেরা/হাইএন্ড কমপ্যাক্ট
দেখিনা কেন সেগুলো আমরা সরাসরি রিয়েল ভিউ না দেখে বিবর্ধিত মডিফায়েড ভিউ
দেখি। এবার ডিএসএলআর এর কথায় আসা যাক, দেখুন ডিএসএলআর এর ওয়ার্কিং ফাংশনঃ
আমরা ক্যামেরার সামনে লেন্স দিয়ে প্রতিফলিত ইমেজ সরাসরি ভিউফাইন্ডার
দিয়ে দেখতে পাই। প্রশ্ন থাকতে পারে, এতে লাইভ ভিউ দেখাতে কি সমস্যা,
সমস্যাটি হল এই জায়গায়ঃ
ছবি তুলবার সময় রিফ্লেকটর (সোজা কথায় আয়নাটি) সরে যায় আর তাই লাইভ ভিউ
পাওয়াটা প্রাথমিক পর্যায়ে সম্ভব ছিলোনা। অলিম্পাস সর্বপ্রথম লাইভ ভিউ
সম্বলিত এসএলআর ক্যামেরা
ই-১০
বাজারে নিয়ে আসে যা রীতিমতন বিপ্লব বটে। কিভাবে সম্ভব হল এটা, প্রশ্ন
আসতে পারে। তারা বেশ মজার একটি কাজ করেছে আর তা হল, তারা এসএলআর এর মধ্যে
কমপ্যাক্ট ক্যামেরার ফাংশন যোগ করেছে। অর্থাৎ, যখন ভিউফাইন্ডার থেকে আপনি
লাইভ ভিউতে সুইচ করবেন তখন ক্যামেরার রিফ্লেকটরটি ম্যুভ করবে বা সরে গিয়ে
আপনার ক্যামেরাকে সরাসরি একটি কমপ্যাক্ট ক্যামেরা বানিয়ে দেবে। বিশ্বাস
হয় না? আপনার ডিএসএলআর এর লাইভ ভিউ অন করে ভিউফাইন্ডারে চোখ রেখে দেখুন,
কিচ্ছু দেখতে পারবেন না, পুরোটাই কালো। অনেক দামী ডিএসএলআর-এ লাইভ ভিউ-এ
সুইচ করার সাথে সাথে সেকেন্ডারি আরেকটা সেন্সর ছবি ক্যাপচার করে ওভার
হিটিং এড়ানোর জন্য, কারন লাইভ ভিউতে ফোকাস চেঞ্জ করার সাথে সাথে
ক্যামেরার সেন্সরকে অনেক ডাটা প্রসেস করে লাইভ ভিউতে প্রদর্শন করতে হয়,
এতে সেন্সরের ওপর বেশী চাপ পড়ে। তাই, লাইভ ভিউ এর কথা যদি বলা হয় তাহলে
বলা যাবে যে, ডিএসএলআর একাধারে দ্বৈতস্বত্তা পালন করছে যা কমপ্যাক্ট বা
হাই এন্ড ক্যামেরা কখনোই পারবেনা।
এসএলআর এর পাঁচ কোনা প্রিজম, যা দিয়ে বাহির থেকে আসা আলো (ছবি) প্রতিফলনের মাধ্যমে সরাসরি ভিউফাইন্ডারে দেখা যায়।
এবার আসি সেন্সর প্রসঙ্গে। ওই যে বলেছিলাম, আমি আর আমার বন্ধু দুজনেই একই মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললেও তার এসএলআর [
অলিম্পাস ই-৪২০] এর ছবি আমার হাই এন্ড ক্যামেরার [
অলিম্পাস এসপি ৫৭০ ইউজি]
চেয়ে অনেক গুনে ভালো এসেছিলো। কেন? ধরাযাক, লুমিক্সের [এফজি ১০০ মডেলের]
একটি হাই-এন্ড ক্যামেরার কথা,গুগলে সার্চ দিয়ে দেখুন ওটার সেন্সরের সাইজ
হল ১/২.৩৩ ইঞ্চি বা ২৪ বর্গমিলি-র মতন। সব কমপ্যাক্ট বা হাই এন্ড
ক্যামেরার সেন্সর এরকম হয়, খুব বেশী হলে বড়জোড় ৪৫ বর্গমিলি হতে পারে,
এর বেশী না। কিন্তু দেখবেন সেগুলোই কিনা ২৫-৩০ মেগা পিক্সেল হওয়া
অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ডিএসএলআর এর সেন্সর অনেক অনেক গুণে বেশী সমৃদ্ধ।
নিচের ছবিটা দেখলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে। ছবিটার একদম নিচের সারিটা হল
কমপ্যাক্ট/হাই এন্ড ক্যামেরার জন্য। বাকি গুলো ডিএসএলার আর জন্যঃ যেমন,
4/3 টেকনলজি চলে আসছে অনেক কাল হল ডিএসএলআরে। আমার পুরোনো সস্তা ডিএসএলআরো
4/3 সেন্সর প্রযুক্তির। সেটাই ডিএসএলআর এর সবথেকে ছোট সাইজের সেন্সর বলা
যায়, মাত্র ২২৫ বর্গ মিমি।
(ছবিটা উইকি থেকে প্রাপ্ত)। আর তাই বলা যায়, ডিএসএলআর এর তুলনা শুধু সে-ই।
১৯৭৫ সালে কোডাকের ইঞ্জিনিয়ার
স্টিভেন ডিজিটাল ক্যামেরার প্রযুক্তি আবিস্কারের পর থেকে এর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। আগে
চার্জড কাপলড ধরনের সেন্সর ব্যবহৃত হত, এখন
মেটাল অক্সাইড সেমিকন্ডাকটর
ধরনের সেন্সর ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক সুবিধার মধ্যে বড় সুবিধাটি হল,
ব্যাটারির চার্জ সাশ্রয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আর ক্যামেরা হয়েছে অনেক
সস্তা ও ফ্লেক্সিবল। আর প্রথম ফুল-ফাংশনড ডিএসএলআর বাজারে আসে
কোডাকের ডিসিএস-১০০, ১.৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেই ১৯৯১ সালে। তার আগের সবগুলি ছিলো এসএলআর অর্থাৎ ফিল্ম ক্যামেরা।
এখন, কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন
ক্যানন ,
নাইকন ,
অলিম্পাস ,
লেইকা ,
ফুজি ,
সনি ,
পেনট্যাক্স বা
স্যামসাং
এদের মধ্যে কোনটি সবথেকে ভালো তাহলে উত্তর হবে, সবগুলোই সাড়ে উনিশ, বিশ,
সাড়ে বিশ, কোনটার মধ্যেই আকাশ পাতাল তফাৎ নেই, কিন্তু তফাৎ আছে মডেলে।
যদিও আমি অলিম্পাসের ডিএসএলআর ব্যাবহার করি, কিন্তু ক্যাননের ওপর আমার
দুর্বলতা আছে (কেন আছে জানিনা, শুধু মনে আছে ছোট বেলায় বাবা একবার
বলেছিলেন যে ক্যাননের ক্যামেরা ভালো আর তাই ওটাই মাথায় বসে আছে)।